কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রজন্ম। (Computer Generation)

 


কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রজন্ম। (Computer Generation):

উৎপত্তি থেকে আজ পর্যন্ত কম্পিউটারের বিশেষ ইলেকট্রনিক যন্তাংশগুলির উন্নতি ঘটিয়ে আজ আধুনিক কম্পিউটারের রূপ দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কম্পিউটারের আকৃতি ক্রমশঃ ছোট ও বহনযোগ্য করা, অধিক তথ্য সঞ্চয় ও কাজের গতি বৃদ্ধি করা (High Speed)। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কম্পিউটারকে এখনও পর্যন্ত পাঁচটি প্রজন্মে (Generation) ভাগ করা যায়। 

প্রথম প্রজন্ম [First Generation ] (1942-1955) :

1945 থেকে 1955 সাল পর্যন্ত কম্পিউটার ব্যবহার হত সেই সকল কম্পিউটারকে প্রথম প্রজন্মের অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির প্রধান উপাদান ছিল ভ্যাকুয়াম টিউব (vacuum Tube) । 1904: ব্রিটিশ প্রকৌশলী জন অ্যামব্রোস ফ্লেমিং প্রথম ভ্যাকুয়াম টিউব থার্মিয়নিক ভালভ আবিষ্কার ও পেটেন্ট করেন।

সুবিধাঃ       

  • কম্পিউটারগুলির গঠন ছিল সরল, এবং কম্পিউটারগুলিতে তথ্য জমা রাখার ব্যবস্থা ছিল।
  • এই সময়কার অন্যান্য যন্তগণকগুলির তুলনায় অতি দ্রুতগতিতে কাজ করতে সক্ষম ছিল।

অসুবিধাঃ    কম্পিউটারগুলি ছিল বৃহৎ আকারের, কাজ করার গতি অত্যন্ত ধীর,তথ্যের ভিত্তিতেফল প্রকাশের ক্ষমতা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহারের ফলে যন্তগুলি থেকে প্রচুর পরিমান তাপ উৎপন্ন হতো, ফলে কম্পিউটারগুলি চালানোর জন্য শীতাতপ নিয়ন্তণ ব্যবস্থা রাখতে হত। এছাড়া সেই যুগের কম্পিউটারগুলি ছিল অত্যন্ত দামি।

উদাহরণঃ    

  • মেশিনঃ ENIAC, EDVAC, EDSAC, UNIVAC-I, MARK-I
  • ল্যাঙ্গুয়েজঃ মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ ও অ্যাসেন্বলি  ল্যাঙ্গুয়েজ।

 

দ্বিতীয় প্রজন্ম [Second Generation] (1956-1964):

1947 খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম শক্‌লে (William Shockley) ওয়ালটার ব্রাটেন (Walter Brattain) ও জন বারডিন (John Boedin) ট্রানজিস্টর নামক একটি উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্র আবিস্কার করেন। কারিগরি বিজ্ঞানের এই উন্নতির ফলে ট্রানজিস্টরকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের উদ্ভাবন হয়। ট্রানজিস্টর যন্ত্রটি ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনার আকারে ছোট এবং অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য, কম তাপ উৎপাদনকারী, অনেক কম বিদ্যুৎ গ্রহন করে ও কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গতিশীল। 

সুবিধা :    প্রথম প্রজন্মের তুলনায় আকারে ছোট, অনেক বেশি বিশ্বস্ত, অনেক দ্রুত গতিতে ক্রিয়াশীল , অনেক কম বিদ্যুৎ শক্তি খরচ                           হত এবং কম তাপের উৎত্তি হত। একই সঙ্গে কম্পিউটারের দাম অনেকটাই কমে গেল।

অসুবিধা :       শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন ও ক্রমাগত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা।

উদাহরণ :       মেশিন : IBM-1401, PDP-I, IBM-7000, IBM-1620, NCR-304 ইত্যাদি।

ল্যাঙ্গুয়েজ :    বিভিন্ন হাই-লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ , যেমন- FORTRAN, COBOL, BASIC, অ্যাল্গল (ALGOL), PL/I ইত্যাদি।

 

তৃতীয় প্রজন্ম [Third Generation] (1965-1975):

কম্পিউটারের বিবর্তনের পথে এর পরের ধাপ তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে সর্বপ্রথম ট্রানজিস্টরের পরিবর্তে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আই-সি) -এর ব্যবহার শুরু হয়। একটি আই-সি চিপ সাধারণত দৈর্ঘ্যে 16 থেকে 18 মিলিমিটার এবং প্রস্থে 6 থেকে মিলিমিটার ও উচ্চতায় 2 থেকে 3 মিলিমিটার হয়। একটি আই-সি ট্রানজিস্টরের তুলনায় অনেক ছোট এবং এর বিদ্যুৎ গ্রহণ ক্ষমতা আরও কম এবং অত্যন্ত দ্রুত কাজ করার ক্ষমতাসম্পন্ন ও অধিক বিশ্বস্ত। এই জেনারেশনে SSIC (স্মল স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) ও MSIC (মিডিয়াম স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) ব্যবহার করা হতো।

সুবিধা :    এই প্রজন্মের কম্পিউটার আকারে অনেক ছোট এবং বহনযোগ্য হল, IC ব্যবহারের ফলে তাপ উৎপাদন অনেক কমে গেল, আগের দুই প্রজন্মের তুলনায় এই প্রজন্মের কম্পিউটার অনেক বেশি গতিশীল ছিল। কম্পিউটারগুলিতে কার্যক্ষমতা, নির্ভরশীলতা ও নির্ভুলতা বৃদ্ধি পেল এবং শীতাতপ নিয়ন্রণের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে গেল।

অসুবিধা :    কম্পিউটারের গঠন আরও জটিল হল, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা এই প্রজন্মেও থেকে গেল।

উদাহরণ :

  • মেশিন :    IBM 360, IBM 370, ICL 2900,  PDP II, CDC 1700 ইত্যাদি।
  • ল্যাঙ্গুয়েজ : PASCAL ও উন্নত FORTRAN, উন্নত COBOL ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ