Affiliate Marketing (অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং)
আপনার একটি যদি থাকে অনলাইন প্লাটফর্ম তাহলে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাহায্যে খুব সহজেই এক্সট্রা ইনকাম করতে পারবেন৷ কথায় আছে না, যার যত থাকে তত লাগে৷ তাহলে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি যদি বাড়তি ইনকাম করা যায় তাহলে ক্ষতি কি?
আপনি কিন্তু খুব সহজেই অনলাইন প্লাটফর্ম যেমন- YouTube channel, website, Facebook profile, Instagram referral, ইত্যাদির মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা উপার্জন করতে পারেন এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি পেশা৷ আর এটি অন্যান্য পেশার তুলনায় কিছুটা ভিন্ন ধরনের৷ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কিছু নিজস্বতা রয়েছে৷ অনলাইন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হিসেবে বিশ্বেজুড়ে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছে৷
আমরা প্রত্যেকেই জানি এই যুগটি ডিজিটাল যুগ৷ দিনে দিনে পৃথিবী গড়ে ওঠেছে নতুন রূপে৷ আর টাকা উপার্জনের একটি সবথেকে সহজ ও লাভজনক একটি মাধ্যম কিন্তু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং৷
চলুন আর দেরি না করে একটু ধারনা দেওয়া যাক এই অনলাইন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ব্যাপারে৷ ইন্টারনেট কেন্দ্রিক দুনিয়ায় আপনাদেরকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানার আগে একটা কথা জানা প্রয়োজন যে ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল, বা ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে টাকা উপার্জনের জন্য৷
চলুন এবার এক এক করে সম্পূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে৷
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
এটি এমন এক আধুনিক প্রক্রিয়া যার সাহায্যে আমরা যেকোনো অনলাইন businessএর digital product অনলাইন স্টোর এর ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট ( physical product ) অর্থাৎ অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায় যে কোন জিনিস আমরা নিজস্ব ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ, ইউটিউব চ্যানেলে এফিলিয়েট লিংক এর সহায়তায় প্রমোট করতে পারি৷
যখন প্রমোট করা প্রোডাক্ট গুলি আপনার লিংক এর সাহায্যে অন্য ব্যাক্তিরা কিনবেন তখন আপনাকে সেই প্রোডাক্টটি বিক্রি করার জন্য সে কোম্পানি আপনাকে কিছু কমিশন টাকা দেয়৷
আরেকটু সহজ ভাষায় বর্ণনা করলে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে অন্যের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রির ব্যবস্থা করে কমিশন আয় করাকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়৷
উদাহরণস্বরূপ - অ্যামাজন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম, যা রয়েছে বর্তমান যুগে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার শীর্ষে৷
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে শুরু করব?
আমরা জানলাম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আসলে কি৷ এবার জানব ঠিক কিভাবে আপনারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবেন৷ যখনই আমরা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবো ভাবী শুরুতেই সকলের মাথায় কমবেশি এই সম্পর্কিত বিষয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক করে৷ এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আশা করছি আপনারা সম্পূর্ণ আপনাদের মনে থাকা প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানতে পারবেন৷ চলুন এবার চলে আসি মূল বিষয়বস্তু৷ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার বেশ কিছু ধাপ রয়েছে৷ এই ধাপ গুলি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো -
১) নিশ বাছাই করা :- সর্বপ্রথম আপনার যা করণীয় তা হল নিশ সিলেকশন করা৷ এখানে নিশ বলতে বোঝায় ধরুন, আপনি একটি ব্যবসা করবেন এখন আপনি যেই জিনিসটি নিয়ে ব্যবসা করবেন সেটিই হচ্ছে নিশ।
সংক্ষিপ্ত অর্থে যদি বলি তাহলে, একটি ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে নিশ হচ্ছে সেই ওয়েবসাইটে "বিষয়বস্তু৷"
ইতিমধ্যেই আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন আলাদা আলাদা টপিক বা বিষয়বস্তু অথবা নিশ নিয়ে অনেক সাইট বা কোম্পানি গড়ে উঠেছে৷ যদি আমি আপনাকে আমার কথা বলি তাহলে এই যেমন আমার এই সাইটিতে আমি নানান ব্যবসা শুরু করা বা যে কোন ব্যবসার ইনকাম বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে থাকি তাই আপনি কিন্তু আমার এই ওয়েবসাইটটি কে একটি Income Generation সম্পর্কিত ওয়েবসাইট বলতে পারেন৷ এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম এই সাইটটির নিশই হচ্ছে টাকা আয় ও তা বৃদ্ধি৷
তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে আপনার সাইটের জন্য একটি নিশ সিলেক্ট করে ওয়েবসাইট শুরু করতে হবে৷ মনে রাখবেন, নির্দিষ্ট টপিক বাছাই না করে যদি আপনি আজ এই টপিক তো কাল ওই টপিক এভাবে অসংখ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন সেক্ষেত্রে আপনার অডিয়েন্স কিন্তু খুবই বিরক্ত বোধ হয়ে পড়বে সেটা আপনার জন্য কখনোই লাভজনক হবে না৷ তাই নির্দিষ্ট টপিক সিলেট করা অত্যন্ত জরুরি৷ কিছু নিশ বা টপিক সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হল -
কোনো প্রোডাক্ট
মোটিভেশনাল
ওয়েট লস
ডায়েট
ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
ওয়েব ডিজাইনিং
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং
হোম ডেকোরেশন
ক্যরিয়ার ডেভেলপমেন্ট
ইনফরমেশন
অনলাইনে আয়
ফ্রিল্যান্সিং
ব্লগিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং
আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং
ভ্রমণ
লাইফ হ্যাক
হেলথ টিপস
বিউটি টিপস
রান্নাবান্না
ব্যবসায়িক আইডিয়াস
ব্যবসায়িক পরামর্শ
শেয়ার বাজার
নিউজ
জোকস
উক্তি
ডিজিটাল মার্কেটিং
এস ই ও
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
পড়াশুনা
ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের নিশ রয়েছে এর মধ্যে যেকোনো একটি আপনার পছন্দের নিশ বেছে শুরু করতে হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রাথমিক পর্ব৷ তবে একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যেই নিশই বাঁছেন না কেন সে সম্পর্কে আপনার জ্ঞান এবং আগ্রহ থাকতে হবে ৷ তাহলেই আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন৷
২) প্রোডাক্ট বাছাই :-
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে যে কোনো নির্দিষ্ট একটি প্রোডাক্ট বাছাই করে নিতে হবে৷ এবং আপনাকে প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে প্রোডাক্টটি প্রমোট করতে হবে৷
৩) ওয়েবসাইট সেটআপ করা :-
প্রডাক্ট সিলেক্ট করার পরবর্তী পর্যায়েই আপনাকে একটি ওয়েবসাইট বানাতে হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য৷ আপনারা ওয়েবসাইটটি নিজেই খোলার চেষ্টা করবেন এটি তেমন কোনো কঠিন ব্যাপার নয়৷ নিজে খুললে সেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটটি বেশি সিকিউরিটিতে থাকবে৷ এরপর প্রয়োজনীয় কিছু টুলস ব্যবহার করে ওয়েব সাইটটি সেটআপ করে নিন৷ এবং অফার, কমিশন রেট, পেমেন্ট পদ্ধতি, পাবলিক রিভিউ এই সমস্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখে অ্যাফিলিয়েট সঠিক প্রোগ্রামিং নির্বাচন করুন৷
৪) SEO করে ওয়েবসাইট র্যাঙ্কিং করানো :-
সার্চ ইঞ্জিন তথা Google, Yahoo ইত্যাদি এই ধরনের সার্চ ইঞ্জিন থেকে traffic বা visitor সাইটে নিয়ে আসতে আপনাদের SEO করে নিজস্ব ওয়েবসাইট রাঙ্কিং করানো প্রয়োজন৷ আর এজন্য আপনার সাইটের আর্টিকেল বা কন্টেন্ট গুলোকে রাঙ্কিং করাতে হবে৷
৫) কন্টেন্ট তৈরি করে সাইটে ভিজিটর নিয়ে আসা : -
আপনার সাইটের জন্য আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে সঠিক কন্টেন্ট তৈরি করা৷ একটি ওয়েবসাইটের জন্য মেইন কন্টেন্ট হচ্ছে article বা blog পোষ্ট করা৷ মনে রাখবেন আপনি যত ভাল কন্টেন্ট তৈরি করে আপনার ওয়েবসাইটে পোস্ট করবেন ততই কিন্তু ট্রাফিক বা ভিজিটর সাইট এ আসবে৷ যত বেশি ভিজিটর আসবে তত বেশি সেল বাড়বে তার সঙ্গে সঙ্গে আফিলিয়েট কমিশন বাড়বে থাকবে৷
ইমেইল মার্কেটিং করেও আপনারা সাইটে ভিজিটর বাড়াতে পারেন৷ কথায় আছে না- " money is in the list " এটি কিন্তু সত্য ৷ আপনার যত ইমেইল সাবস্ক্রাইবার থাকবে ততো আফিলিয়েট কমিশন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে৷
৬) অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রমোট করা :-
সবশেষে এই ধাপটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হিসেবে গণ্য রয়েছে৷ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর সংযুক্ত হয়ে প্রোডাক্ট প্রমোট করতে হবে৷ আর এই প্রোডাক্ট প্রমোট করার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং marketplace এ যেয়ে সাইন আপ করতে হবে৷ এবং সেখান থেকে আপনাকে ইউনিক অ্যাফিলিয়েট লিংক কালেক্ট করে লিংক গুলিকে আপনার আর্টিকেল এর নানান জায়গায় যুক্ত করে দিতে হবে আর আপনার দেওয়া লিংকে যখনই কোন ট্রাফিক বা কোন ভিজিটর ওই লিংকে ক্লিক করে আপনার রেকমেন্ডেড প্রোডাক্টটি কিনবে তখনই আপনি সেখানে থেকে কিছু কমিশন পেয়ে যাবেন৷
এই সমস্ত কিছু হয়ে যাওয়ার পর আপনি থেমে বসে থাকবেন না আরো প্রচুর পরিমাণে রিসার্চ করুন এবং আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কাজটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান ৷
জনপ্রিয় কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর নাম :-
সব অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামই বেশ ভালো, বেশ জনপ্রিয়ও বটে৷ কিন্তু তার মধ্যেও বেশ কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে যা এতটা জনপ্রিয় অর্জন করেছে তা বলার অবকাশ রাখে না৷ চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই সেই জনপ্রিয় কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম গুলি সম্পর্কে৷ যথা -
১) Flipkart affiliate program :- এটি ভারতের সর্ববৃহৎ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম গুলোর মধ্যে একটি৷ এটি আপনাকে প্রচুর প্রোডাক্ট এর ওপর অ্যাফিলিয়েট করার সুযোগ প্রদান করে থাকে৷ এবং বিনামূল্যে এখানে যে কেউ কাজ করতে পারেন৷ এটি একটি বিশ্বস্ত অনলাইন প্লাটফর্ম ৷ কোন সমস্যা ছাড়াই ফ্লিপকার্টে খুব সহজেই মানুষ কাজ করতে পারেন এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের ফ্লিপকার্ট ভালো কমিশন দিয়ে থাকে৷
২) Amazon affiliate marketing :- অ্যামাজন হচ্ছে বিশ্বের আরেকটি জনপ্রিয় প্রোগ্রাম৷ অ্যামাজন তার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং এখানে রেজিস্ট্রেশন করা খুব সহজ৷ কিছু details এর মাধ্যমে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে পারেন৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কমার্স প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে অ্যামাজন তাই আপনি এখানে ছোট থেকে বড় বা ঘরে বাইরে ইত্যাদি ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্রচুর জিনিস এখানে পেয়ে যাবেন৷ ১০-১২ % কমিশন এখান থেকে উপার্জন করতে পারেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে৷ তা ছাড়াও আরও বেশ কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম রয়েছে -
রিমেলার ক্লাব
ভি কমিশন
ইবে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম
গো ড্যাডি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ইত্যাদি ৷
এবার দেখে নেব অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ঠিক কিভাবে কাজ করে ?
প্রথমেই আপনাকে যা করতে হবে তা হল একজন সেলার বা প্রোডাক্টের উৎপাদনকারী কে একটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম তৈরী করে এবং প্রোডাক্ট প্রমোট করার জন্য ইউনিক লিংক প্রদান করতে হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের উদ্দেশ্যে৷ এই ইউনিক লিংক ব্যবহার করে প্রতি আফিলিয়েট মার্কেটার থেকে আসা সেল কে গণনা করা যায় খুব সহজেই৷ এই লিঙ্ক এর সাহায্যে যখন কোন কাস্টমার কোন প্রোডাক্ট কিনে তখন browser কুকির মাধ্যমে ডাটা সংরক্ষিত হয়৷ এই কুকি কিন্তু সেলারকে জানিয়ে দেয় অ্যাফিলিয়েট সেল সম্পর্কে৷ কুকি থেকে প্রাপ্ত ডাটা অনুসারে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের প্রাপ্ত কমিশন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয় সেলার বা উৎপাদনকারী৷
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের প্রধান চারজন পক্ষ রয়েছে৷ যথা-
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার
সেলার
নেটওয়ার্ক
কনজ্যুমার
এই চার প্রধান পক্ষ সম্পর্কে চলুন একটু বিস্তারিত ধারণা দেওয়া যাক৷ প্রথমেই রয়েছে -
১) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার :- যে ব্যক্তি সেলারের কোন প্রোডাক্ট কমিশনের উদ্দেশ্য প্রমোট করেন তাকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার বলা হয়৷ যেমন- কোন ব্যক্তি অ্যাফিলিয়েট সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ব্লগ, ভিডিও ও বিভিন্ন রকমের কন্টেন্ট এর দ্বারা একজন সেলারের প্রোডাক্ট প্রমোশন চালান৷
২) সেলার:- সেলার হল যে প্রোডাক্ট তৈরি অথবা বিক্রি করছেন তাকেই বলে৷ অর্থাৎ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর হোস্ট হচ্ছে সেলার৷
৩) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক :-
নেটওয়ার্ক কিন্তু আবশ্যিক কোন উপাদান নয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য৷ তবুও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবস্থান করে রয়েছে এই নেটওয়ার্ক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং৷ সেলাররা নানান ধরনের অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক ব্যাবহৃত ব্যবহার করে থাকেন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ম্যানেজ করার উদ্দেশ্যে৷ এক কথায় আমরা বলতে পারি সেলার ও অ্যাফিলিয়েট এর মধ্যে সম্পর্ক সংযোগ ঘটানো নেটওয়ার্ক এর প্রধান কাজ৷ কিছু জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক হচ্ছে- ক্লিকব্যাংক, শেযার-অ্যা-সেল ইত্যাদি৷
৪) কনজ্যুমার :- কনজ্যুমার বলতে বোঝায় তাদের যারা অ্যাফিলিয়েট লিংকটি ব্যবহার করে প্রোডাক্ট ক্রয় করেন৷ অর্থাৎ একজন কনজ্যুমার এর ক্রয়কৃত প্রোডাক্টের লাভের একটি অংশ কমিশন ভিত্তিক পাচ্ছে একজন অ্যাফিলিয়েট৷
আশা করছি সবাই বুঝছেন ঠিক কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবেন এর পদ্ধতি এটি কীভাবে কাজ করে৷
তাহলে এবার দেখে নিব অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কেন করবেন এবং এর সুবিধা কি কি?
আপনি কি জানেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি স্মার্ট এবং আধুনিক পেশা৷ এই পেশার কিন্তু কিছু নিজস্বতা রয়েছে আর এর জন্য এই পেশাটি অন্যান্য পেশার থেকে একটু ভিন্ন ধরনের৷ অনলাইনে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা বিশ্বসেরা৷ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর অনেক গুলি সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা রয়েছে৷ যেমন-
এখানে অন্যের প্রোডাক্ট সেল করে ইনকাম করার সুবিধা রয়েছে৷
নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রোডাক্ট ওয়েবসাইটে দেওয়া যায়৷
নিজের ঘরে বসেই এ কাজটি করা সম্ভব৷
ফুলটাইম ক্যারিয়ার বানানো যায়৷
নিজস্ব সময় স্বাধীনতা বজায় থাকে৷
বিভিন্ন কোম্পানির কাছে যথেষ্ট ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানো যায়৷
একটিমাত্র অ্যাফিলিয়েট সাইট এর সাহায্যে একাধিক উপায়ে ইনকাম করা যায়৷
অল টাইম একটিভ না থাকলেও চলে৷
অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেও এই কাজটি করা সম্ভব৷
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে কোন রকম টাকা ইনভেস্ট করার প্রয়োজন পড়ে না৷
নিজস্ব প্রডাক্ট না হলেও চলে৷
প্রোডাক্ট সেল করার পর সার্ভিস নিয়ে কোন চিন্তা থাকে না৷
নিজেই নিজের মালিক হিসেবে কাজ করা যায়৷
ইচ্ছে স্বাধীন কাজ করার জন্য যখন তখন ভ্রমণে যাওয়া যায়৷
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে কোন বিড করার প্রয়োজন পড়ে না৷
আনলিমিটেড ইনকাম করা যায়৷
ঘুমিয়ে থাকলেও ইনকাম করা যায়৷
একটা এন্ড্রয়েড মোবাইল বা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে আপনি যেকোন জায়গা থেকে এই কাজটি করতে পারেন ইত্যাদি৷
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর অনেক সুবিধা থাকলেও বেশ কিছু অসুবিধাও লক্ষ করা যায়৷ যেমন -
ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রথমদিকেই সবাই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় না৷
মজার ব্যাপার হলো এখানে নিজের জীবনে গার্লফ্রেন্ড - বয়ফ্রেন্ড এর জন্য রিস্ক নিতে রাজি থাকলেও এই ইন্ডাস্ট্রির রিস্কটা অনেকে নিতে চায় না৷
আয়ের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা বিরক্তিকর বলে মনে হয়৷ অর্থাৎ ধৈর্য করতে হয় অনেকদিন আয়ের জন্য৷
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ বিষয়টি যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমে হয় সেক্ষেত্রে এখানে আপনার ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড চুরি বা লিংক চুরির মতো বিষয়গুলি হতে পারে৷
অনেক সময় প্রতারক মানুষের দ্বারা আপনি প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়তে পারেন৷
অনেক সময় বেশ কিছু কোম্পানি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার পাওয়ার জন্য কমিশনের লোভ দেখায় পরে আবার কমিশন কমিয়ে দেয় তাই যেকোনো কোম্পানির সাথে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার আগে সমস্ত কিছু একটু ক্ষতিয়ে দেখা প্রয়োজন৷
এফিলিয়েট মার্কেটিং বা অন্যান্য সমস্ত অনলাইনের পেশার অনিশ্চিয়তা বেশি৷ কারণ প্রতিনিয়ত অনেক নতুন নতুন আপডেট হচ্ছে তাই আজকে অ্যাফিলিয়েট থেকে ভালো ইনকাম হলে পরেও যে হবে সেটার কোন গ্যারান্টি নেই৷ ইত্যাদি
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে আয় করা যায়?
একজন কনজ্যুমার ফর্ম সাবমিশন, ক্লিক, ইত্যাদি থেকে একজন অ্যাফিলিয়েট আয় করতে পারেন৷
যেমন-
১) পার সেল :- এটি জনপ্রিয় একটি মডেল হিসেবে পরিচিত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে৷ এই পেমেন্ট মডেলে অ্যাফিলিয়েটের মাধ্যমে বিক্রি করা প্রোডাক্ট এর উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট একাংশ কমিশন দেওয়া হয়৷
২) পার ক্লিক :- এই মডেলে কমিশন পাওযার জন্য কোন সেল এর প্রয়োজন পড়ে না৷ শুধুমাত্র কোন কনজ্যুমার অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করলেই অ্যাফিলিয়েট কমিশন দেয়া হয়৷
৩) পার লিড :- এই মডেলে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার দ্বারা জেনারেট করা প্রতি লিড এর জন্য পেমেন্ট করা হয়ে থাকে৷
চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে মাসে ঠিক কত টাকা আয় করা যায়?
প্রথমেই বলে রাখি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার ওপর৷ আপনি ঠিক কিভাবে পরিচর্যা করবেন তার ওপর৷ যদি উদাহরণ দিয়ে বুঝায় তাহলে, আপনি কত দামী জিনিস মার্কেটিং করছেন এবং আপনাকে প্রতিটি প্রোডাক্টের বিক্রিতে ঠিক কত টাকা কমিশন হচ্ছে ও আপনি কত প্রোডাক্ট আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে সেল করেছেন এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে আপনি যে প্রোডাক্টটি সেল করছেন তার চাহিদা মার্কেটপ্লেসে ঠিক কতটা তার ওপরে পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার আর্থিক ইনকাম।
যদি আপনাকে আমি বলি এটি দারুন সহজ একটি কাজ তাহলে হয়তো আপনাকে ঠকানো হবে৷ মাথায় রাখবেন পৃথিবীতে কোন কাজই সহজ নয় আর চেষ্টা করলে কোন কাজই কঠিন নয়৷ বিশ্বাস করুন অল্প কঠিন কিন্তু আমি সত্যি বলছি আপনি যদি এই অনলাইন ব্যবসা একবার ধরে ফেলেন তাহলে এত টাকা আয় করতে পারবেন যে আপনি কল্পনাও করতে পারচ্ছেন না৷
বর্তমান ইন্টারনেট কেন্দ্রিক দুনিয়ায় প্রায় অধিকাংশ মানুষ এর মাধ্যমে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে তাই আপনি যদি চেষ্টা করেন কথার কথা লাক্ষ লাক্ষ না হলেও হাজার হাজার টাকা চোখ বন্ধ করেই আপনি উপার্জন করতে পারবেন৷ তবে হ্যাঁ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ব্যাপারটি ভালো করে একটু বুঝতে হবে এবং কিছু জায়গায় আপনাকে expert হতে হবে৷ তাহলেই আপনি চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তেই টাকা ঘরে বসেই রোজগার করতে পারবেন৷
যেমন ধরুন, আপনি blogging এর সম্পর্কিত আর্টিকেল বা ভিডিও নিজের YouTube channel এ আপলোড করেন৷ তাই আপনার blog এ আশা visitor বেশিরভাগ web hosting বা domain কিনতে আগ্রহী হয়ে থাকে৷ সে ক্ষেত্রে আপনার করণীয় কাজ এটাই হবে যে, আপনি ভালো একটি domain ও hosting কোম্পানিতে গিয়ে নিজেকে অ্যাফিলিয়েট হিসেবে রেজিস্টার করে তাদের প্রোডাক্ট নিজস্ব YouTube channel বা Blog এর article এ অ্যাফিলিয়েট link এর মাধ্যমে প্রমোট করতে পারেন৷ এবং আপনার visitor দের এ প্রোডাক্ট গুলি কিনতে বলতে পারেন৷ এবং আপনি প্রতিটি purchase কিন্তু ১০% থেকে ২০% অব্দি কমাতে পারবেন৷
এখন দেখুন আপনার এফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে প্রমোট করা প্রোডাক্ট গুলি কাস্টমাররা যদি মাসে ২০ টা প্রোডাক্ট যেমন domain এবং hosting কেনে এবং একটি hosting এর মূল্য যদি বছরে ৭০০০ হয় তাহলে প্রত্যেক কেনাতে আপনাকে ২০% কমিশন দেওয়া হয় তাহলে আপনার মোট ইনকাম দাঁড়ায় মাসে -
৭০০০*২০= ১,৪০,০০০/-
১,৪০,০০০*২০/১০০= ২৮,০০০ টাকা৷
Mr. Harsh agarwal তিনি ভারতের বিখ্যাত একজন ব্লগার৷ তার লেখা একটি আর্টিকেলে তিনি বলেছেন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে তিনি মাসে ৩০,০০০ ডলার ইনকাম করে৷ তিনি আরো বলেন limitless টাকা অর্থাৎ unlimited income করার খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং৷ তিনি ব্লগের মাধ্যমে 10 বছর ধরে প্রোডাক্ট গুলি মার্কেটিং করছেন এবং তার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন৷
সবই তো ঠিক আছে তবুও একটা প্রশ্ন রয়ে যায় যে কিভাবে আয় করা টাকা আপনারা তুলবেন?
চিন্তার কোন কারণ নেই, অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম এর সাহায্যে ইনকাম করা কমিশন আপনি খুব সহজেই নিজের bank account এ তুলে নিতে পারবেন৷ bank account option ওখানেই উল্লেখ করা থাকে৷
শেষ কথা,
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কেন করব, কিভাবে করব, এটি কিভাবে কাজ করে, এর সুবিধা অসুবিধা ইনকাম করার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবি জানলাম৷ তবে শেষে একটাই কথা বলার যে, যদি সঠিক পদ্ধতিতে এটি ব্যবহার করেন তাহলে ইনকাম এত হবে যে এর কোনো সীমা থাকবেনা৷ তবে সর্বদাই মনে রাখবেন ইন্টারনেট জগতে followers/ visitors/ traffic প্রচুর পরিমাণে থাকা অতি আবশ্যক৷ তাহলেই প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন খুব সহজেই৷ কিছু লাভজনক অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট হলো - মোবাইল বা স্মার্টফোন, ডোমেইন এবং হোস্টিং, বই, ওয়ার্ডপ্রেস থিম, ল্যাপটপ, কাপড় জামা ইত্যাদি৷

Post a Comment